
গত এক বছরে দেশে স্বর্ণের দাম ৩৪ বার বেড়েছে। প্রায় প্রতি মাসেই একাধিকবার স্বর্ণের মূল্য পরিবর্তনের কারণে সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে বাজার বিশ্লেষক পর্যন্ত বিস্মিত। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাজুস (বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি) তাদের তথাকথিত আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার সংকট এবং আমদানি ব্যয়ের অজুহাত দেখিয়ে বারবার মূল্য সমন্বয় করে। কিন্তু এই ঘন ঘন মূল্য পরিবর্তনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।
স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা
বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম দীর্ঘদিন ধরেই স্থিতিশীল ছিল না। বৈশ্বিক বাজারে দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও দেশে তার প্রতিফলন দেখা যায় অনেক বেশি মাত্রায়। বাজুসের সিদ্ধান্তে কখনো দিনে একাধিকবারও দাম পরিবর্তন হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বিয়ে বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য স্বর্ণ কিনতে আসা ক্রেতারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
বাজুস দাবি করে থাকে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট এবং কর কাঠামোর কারণে তাদের এভাবে মূল্য সমন্বয় করতে হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর মতে, বাজুসের এই প্রক্রিয়া অনেকাংশেই স্বচ্ছ নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম সামান্য কমলেও দেশে তা কমানোর প্রবণতা দেখা যায় না, বরং দাম স্থিতিশীল থাকে বা আরও বাড়ানো হয়।
ভোক্তাদের ক্ষোভ
ঘন ঘন দাম বাড়ার কারণে ভোক্তারা ক্ষুব্ধ। অনেকেই মনে করছেন, বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব এবং নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দুর্বলতার সুযোগে বাজুস ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করছে। এভাবে স্বর্ণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে স্বর্ণ ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যাবে।
করণীয়
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা আনা জরুরি। স্বর্ণ আমদানি ও বিক্রয় প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়ন করে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে। পাশাপাশি বাজুসকে তাদের মূল্য নির্ধারণের যুক্তি ও হিসাব খোলাখুলি প্রকাশ করতে হবে।
বাংলাদেশে স্বর্ণ শুধু অলংকার নয়, অনেকের কাছে এটি নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতীক। তাই এ খাতের স্থিতিশীলতা অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এক বছরে ৩৪ বার দামের পরিবর্তন যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, তার জবাব বাজুসকেই দিতে হবে।